#Bike_Trip: অ্যাডভেঞ্চারের আরেক নাম লাদাখ- রাজীব মুখার্জি
লে-মানালি হাইওয়েতে আপনাদের স্বাগত জানাই । বাইক সফর দুই বন্ধুর । ভূ-স্বর্গে প্রবেশের পর অপরূপ দর্শন । তারই সঙ্গে গিরিপথ । এরই মধ্যে বিপত্তি । যাত্রাপথের সামনে এসে পড়ল বিশাল দুই পাথরের চাঁই । রাস্তা বন্ধ । হাঁটারও উপায় নেই । কিভাবে পেরোবে পাঁচ পাঁচটা গিরিপথ ? লাদাখ ঘুরে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা জানালেন রাজীব মুখার্জি... ।
(প্রথম কিস্তি)
প্রায় ৪৯০ কিমি দীর্ঘ রাস্তা দুই দিনে পার হয়ে আমাদের গন্তব্য জম্মু-কাশ্মীর এর লাদাখ জেলার সদর শহর লে। যাত্রাপথে এই রাস্তা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না । এই রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয় ১৯৮৯ সাল থেকে । রাস্তা খোলা থাকে বছরে মাত্র সাড়ে চার মাস - জুন থেকে অক্টোবর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত । বাকি সময় রাস্তার বেশীরভাগ অংশ বরফে ঢাকা থাকে ।
লে যাওয়ার পথে পার হতে হয় পাঁচটি পাস বা গিরিপথ । প্রথম সবার পরিচিত রোটাং পাস - উচ্চতা ১৩০৬০ ফুট । তারপর একে একে বারালাচা লা ১৬০৫০ ফুট, নাকি লা ১৫৫৫১ ফুট, লাচুং লা ১৬৬০০ ফুট এবং শেষে তাংলাং লা ১৭৫৮২ ফুট – এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম গিরিপথ ।
এই রাস্তার ২৩০ কিমি অর্থাৎ মানালি থেকে সারচু পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশেএবং সারচু তে রাজ্য সীমা পার হওয়ার পর লে পর্যন্ত বাকি ২৬০ কিমি রাস্তা জম্মু-কাশ্মীর এর অন্তর্গত । সারচু-তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে হিমাচলের লাহুল এলাকা । এরপরই শুরু কাশ্মীরের জান্সকার এলাকা । এই পথে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেলং এর আগে তান্ডিতে পেট্রোল পাম্প । এখানে তেল ভরার পর বাকি ৩০০কিমি রাস্তায় আর কোনও পেট্রোল পাম্প নেই ।
ফিরে আসি আমাদের যাত্রাপথে । সকাল সাড়ে ৬টায় মানালির হোটেল থেকে বের হই । কিছুটা সমতলে চলার পর আমরা শুরু করি রোটাং পাসের চড়াই । কিন্তু, কপালে বিপত্তি থাকলে খণ্ডাবে কে ? সকাল ৯টা নাগাদ বশিষ্ঠ আশ্রম , নেহরু কুন্ড পার হওয়ার পর দেখা গেল রাস্তা বন্ধ। রাস্তা এমনভাবে বন্ধ যে পাশ দিয়ে গাড়ি তো দূরে থাক , হেঁটে যাওয়ারও রাস্তা নেই । আমাদের গাড়িগুলো একটা বাঁকের মুখে অন্য আরও সব গাড়ির পিছনে দাঁড় করিয়ে দেখতে গেলাম ব্যাপারটা কি ! শুনলাম নাকি দুটো বড় বড় পাথর পরস্পর গলা জড়িয়ে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়েছে রাস্তায় ।
ব্লাস্ট করিয়ে পাথর ভেঙে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু হল বেলা ১১টা নাগাদ । যান চলাচলের রাস্তা খুলল প্রায় বেলা ৩টের সময় । মাঝের সময়ে আমরা ছোট কাগজের কাপে এক কাপ কফি ৬০টাকায় কিনে ২জন করে ভাগ করে খেয়ে এবং সঙ্গে থাকা বিস্কুট চানাচুরের সদ্ব্যবহার করে সময় কাটালাম । তবে, এই সময়টাতে একটা বিষয় বুঝলাম ,যে বিনা কাজে এক জায়গায় বসে থাকার চেয়ে ক্লান্তিকর আর কিছু নেই ।
যাই হোক ৬ ঘণ্টা পরে বেলা ৩টে নাগাদ আমরা আবার রওনা দিলাম আমাদের গন্তব্যের দিকে । পথে কোঠি, রোহলা, মারি এবং রোটাং পাস পার হয়ে আমরা পৌঁছলাম গ্রামফু । পথ এখানে দু-ভাগ হয়ে গেছে । ডানদিকের রাস্তা চলে গিয়েছে কুনজুম পাস পার হয়ে কাজা শহরের দিকে । আমরা চললাম বাম দিকের রাস্তায় । রাস্তা এখানে খারাপ বললে কম বলা হয় , ছোটবেলায় আমাদের গ্রামের রাস্তায় বর্ষার পরে চলতে গেলে হাঁটু পর্যন্ত কাদার স্মৃতি ফিরে এল এখানে ।
খুব সাবধানে বাইক চালিয়ে, কাদায় আছাড় খাওয়া বাঁচিয়ে যখন খোকসার নামলাম , তখন দিনের আলো প্রায় নিভে গিয়েছে । এখানে অল্প কিছু খেয়ে আবার পথ চলা শুরু । চন্দরা নদীর ডান অববাহিকায় ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট শহর শিশু বা খাগ্লিং পার হয়ে পরবর্তী থামা তান্ডি। এখানে রাস্তা আবার দু’ভাগ হয়েছে । সোজা রাস্তা চলে গিয়েছে উদয়পুরের দিকে। আমরা যাব ডানদিকের রাস্তায় । আগেই বলেছি এই তান্ডিতেই শেষ পেট্রোল পাম্প। তারপর ৩০০ কিমি রাস্তায় আর কোনও তেল নেওয়ার জায়গা নেই । আমরা সবাই যে যার বাইক ফুল ট্যাঙ্ক করে রওনা দিলাম । তখন ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যা ৭টা, অন্ধকার হয়ে গেছে । পৌঁছলাম কেলং পেরিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০৮৯০ ফুট উচ্চতায় জসিপাতে । ঠিক হল এদিনের মতো পথ চলা এখানেই স্থগিত করব ।
(ক্রমশঃ)
- কয়লাঘাটা-ভবন-অগ্নিকান্ডে-প্রধা
- আনন্দের-বলি-দিয়ে-শুরু-গণতন্ত্র
Comments